কোটি মানুষকে নিত্যপণ্য কিনতে বিশেষ কার্ড দেয়া হবে : প্রধানমন্ত্রী

1 min read

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

ঢাকা, ১৫ মার্চ, ২০২২ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কম দামে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে এক কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এক কোটি মানুষকে টার্গেট করেছি, আমরা তাদের বিশেষ কার্ড দেব যাতে তারা ন্যায্য মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে সূচনা বক্তব্য সরকারের এ পরিকল্পনার কথা জানান।


ইতোমধ্যেই কভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন ৩৮ লাখ লোক আর্থিক সহায়তা পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই এদের সাথে আরও অনেককে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং শেষ পর্যন্ত মোট এক কোটি মানুষ এই কার্ড পাবে।’
তিনি উল্লেখ করেন ইতোমধ্যেই ৫০ লাখ লোককে কার্ড দেয়া হয়েছে, যাতে তারা ১০ টাকায় চাল কিনতে পারে।
ভোজ্য তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে  প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তেলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে টাস্ক ফোর্স গঠনের কথা বলেছি। মজুদ তেলের কোথাও ‘হোল্ডিং’ হচ্ছে কি-না  তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘ভোজ্য তেলের ভ্যাট কমিয়ে দেয়া বা একটু সমন্বয় করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। যাতে রমজান মাসে কোন সমস্যা না হয়।’
‘কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি হলে তখন আর খুব বেশি করার কিছু থাকেনা। তখন একটু ‘কমপ্রোমাইজ’ করতেই হয়’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের কারনে (রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ) পরিবহন ব্যয় অর্থাৎ কার্গো ভাড়া খুব বেড়ে গেছে। কারণ, সোয়াবিন তেল আমাদের ব্রাজিল থেকে এবং পামওয়েল মালয়েশিয়া থেকে আসে।
ভোজ্য তেলের বিষয়ে দেশ এখন শতকরা ৯০ ভাগ আমদানী নির্ভরশীল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের বিজ্ঞানীরা ষর্ষের কয়েকটি বীজ আবিস্কার করেছেন যার ভাল উৎপাদন হবে। আগামী কয়েক বছরে পিঁয়াজ আর বাইরে থেকে আনতে হবেনা, আমরাই রপ্তানি করতে পারবো। এ ব্যাপারেও বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন।


তিনি বলেন, প্রত্যেকটা জিনিষ যেন আমরা নিজেরা উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারি সে রকম একটা অবস্থানে আমাদের যেতে হবে। কারো মুখাপেক্ষী হয়ে যেন থাকতে না হয় সে জন্য আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সরকারের কাছে যথেষ্ট খাদ্য মজুদ আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এখনো ১৮ লাখ টন খাদ্য মজুদ আছে আমাদের। সেখানে কোন অসুবিধা নাই।’
ফসল উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি এ সময় বলেন, ‘কারো এতটুকু জমি যেন অনাবাদী না থাকে, যে যা পারেন সেটাই উৎপাদন করবেন। প্রত্যেকটা এলাকাতেই কিছু না কিছু উৎপাদন হবে। সেটাই আমার লক্ষ্য। তাতে আমাদের যে খাদ্য চাহিদা সেটা যেন পূরণ করতে পারি।’
অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি প্রদান, জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে আন্তর্জাতিক প্রামান্য দলিলে স্থান করে দেয়া এবং সর্বশেষ জয় বাংলাকে জাতীয় শ্লোগান ঘোষণায় তাঁর সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান আমাদের হয়েছে। স্বাধীনতার চেতনা যা মুছে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল সেগুলোকে পুণরুজ্জীবিত করে একে একে সামনে নিয়ে আসার কাজটা আমরা করতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি আহুত সংলাপে যোগদান করায় ১৪ দলীয় নেতৃবৃন্দ ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি বিএনপি’র অংশ না নেয়ার কঠোর সমালোচনা করে তাদের ‘নেতৃত্বের শূণ্যতা’ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “একজন এতিমের টাকা আত্মস্যাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত, আরেকজন ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায়, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক। কাজেই তারা ক্ষমতায় গেলে তাদের নেতৃত্ব দেবে কে?”
তাদের সামনে কোন নেতৃত্ব না থাকলেও উল্টো-পাল্টা বক্তব্য তারা দিয়ে যাচ্ছে। আর তাঁর করে দেয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশন সংস্কারে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন ছবিসহ ভোটা তালিকা প্রণয়ন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণ এবং বর্তমানে ইভিএম এর মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন,“এগুলো করাতে মানুষের ভোটের অধিকারটা নিশ্চিত হয়ে গেছে।”
এ প্রসঙ্গে বিএনপি সরকারের করে যাওয়া ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার কথাও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।
জাতির পিতার রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় তুলে আনায় তাঁর সরকারের সাফল্য উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, কিছু কিছু চ্যালেঞ্জ যা রয়েছে সেগুলো মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলাপ আলোচনা যেমন চলছে, তেমনি তাঁর সরকারের প্রতিষ্ঠিত দেশের ১শ’ বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগ আনায় সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এ সময় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পায়রাতে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করা হচ্ছে হচ্ছে এবং দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব হয়েছে বলেও জানান। যেখানে গ্রিড লাইন নেই বা নির্মাণ সম্ভব নয়, এ রকম প্রত্যন্ত অঞ্চলে  সোলার প্যানেল এবং সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে- সন্দিপ এবং ভোলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলেও জানান।
জাতির পিতার ‘গুচ্ছগ্রাম’ প্রকল্পের পদাংক অনুনরণ করে গৃহহীণদের জন্য ঘর করে দেয়া তাঁর সরকারের প্রকল্পের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০ লাখ ঘর বিনে পয়সায় দেয়া হয়েছে। আরো ৫০ ঘর-বাড়ি দেয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জন্য ‘পোর্টেবল হোম’ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতা জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছি। এ সময় এ দেশের মানুষ হতদরিদ্র থাকবে, এটা হতে পারে না।
মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়া, লার্নিং এন্ড আর্নিং এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘরে বসে বিদেশি মুদ্রা আয়ের পথ সৃষ্টি, ফ্রিল্যান্সারদের জন্য স্বীকৃতির ব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচি সম্প্রসারণসহ তাঁর সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে সুন্দর জীবন দেয়ার জন্য যা যা করার দরকার তাই আমরা করে যাচ্ছি। ’৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো জনগণের কল্যাণ চিন্তা না করলেও আমরা চাই তা করতে এবং জনগণের জীবনমানের উত্তোরণ ঘটাতে। যেটা জাতির পিতারও স্বপ্ন ছিল।

সংবাদ সম্পর্কে আপনার মতামত

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.