স্টাফ রিপোর্টারঃ
দীর্ঘ অপেক্ষার পর পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে সেতু বিদ্যুতালোয় আলোকিত হয়েছে উঠেছে। আগামী ২৫ জুন সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী দিনে দক্ষিণ বঙ্গের ২১ জেলার ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতির সম্ভাবনায় পদ্মা সেতুর জাজিরার নাওডোবা পয়েন্টে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। সেতুর সুফল বেশীরভাগ ভোগ করবেন শরীয়তপুরবাসী এমন ধারণা রয়েছে। তবে এখনও শরীয়তপুর থেকে সেতু পর্যন্ত নতুন কোন সড়ক তৈরী হয়নি। তবুও উদ্বোধনের প্রথম দিনেই প্রাইভেট কার, মোটরবাইক বা গণপরিবহনে পদ্মা সেতু পার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন উচ্ছ্বাসিত শরীয়তপুরবাসী।
শরীয়তপুর আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ পুরাতন জরাজীর্ণ বাস পিছনে ফেলে অত্যাধুনিক ননএসি ও এসি বাস তৈরীতে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে চার শতাধিক বাস নির্মাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রথম দিন থেকেই এই সকল যাত্রিবাহী বাস শরীয়তপুর জেলাসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে এবং ঢাকা থেকে শরীয়তপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে। একই সাথে পন্যবাহা গাড়িও যাতায়াত করবে এই সেতু দিয়ে। এতে খরচ অকেটা বাড়লেও সময় ও ভোগান্তি কমবে অনেক গুন। এই প্রত্যাশায় রয়েছে শরীয়তপুরবাসীর। তবে এখনও শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত দুইলেন বা চারলেনের কোন সড়ক নির্মাণ হয়নি। নামীদামী এসি/ ননএসি বাস নিয়ে সড়কে ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন বাস মালিক সমিতি। সেতুর টোলের সাথে মিল রেখে ৮৫ কিলোমিটার পথে জনপ্রতি ননএসি ৩০০ টাকা ও এসি ৪০০ টাকা ভাড়া ধার্য্য করেছেন তারা।
শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ফারুখ আহাম্মদ তালুকদার বলেন, শরীয়তপুর, ঢাকার সাভার, মুন্সিগঞ্জ ও মাদারীপুরে নতুন গাড়ি তৈরীর কাজ চলছে। সেতু খুলে দেওয়ার আগেই আমাদের ননএসি বাসগুলো চলাচলের জন্য প্রস্তুত থাকবে। এসি বাস নির্মাণে একটু বেশী সময় লাগে তাই সেতু খুলে দেয়ার ৩ মাসের মধ্যে এসি বাসগুলো সড়কে নামতে পারব। শরীয়তপুর থেকে ঢাকার গুলিস্তান, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ভুলতা গাউছিয়া ও নারায়ণগঞ্জ রুটে চলবে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সংবাদে সাড়া পড়েছে কৃষি বিভাগেও। কৃষকদের মাঝে উদ্দিপনা দেখা দিয়েছে নতুন ফসল উৎপাদনের। কৃষি বিভাগও ফসল উৎপাদনে কৃষকদের পাশে থেকে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নির্দেশনা প্রদান করছেন। ফেরী পারাপার সার্ভিসে শাক-সব্জি রাজধানীতে পাঠাতে কৃষকরা অনেক ভোগান্তির শিকার হতেন। সেতু পারাপারে দ্রুত সময়ে তাদের উৎপাদিত পন্য রাজধানীতে বিক্রি করে লাভবানের প্রত্যাশায় তারা চাষাবাদে গুরুত্ব দিয়েছেন। এই মৌসুমে কৃষকরা ঝিঙ্গা, পোটল, দুন্দুল, রেখা, বেগুন, শশা চাষে বেশী বিনিয়োগ করছেন।
পদ্মা সেতু ঘিরে শেখ রাসেল সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা, বিদ্যুতের পারহাউজ পূর্বেই নির্মিত হয়েছে। এবার ১২০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে শেখ হাসিনা তাঁত শিল্পের জন্য। তাঁত পল্লির অধিগ্রহণকৃত জমিতে ইতোপূর্বে ভূমি উন্নয়ন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তাঁত শিল্পে দক্ষতা বাড়াতে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এছাড়াও শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার চারলেন সড়কের কাজ শুরু হয়েছে। সড়ক ঘিরে দেখা গেছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত সাইনবোর্ড। সড়কের কাজ সম্পন্ন হলেই তারা শিল্প, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ হাসপাতাল ক্লিনিক গড়ে তুলবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি সভা করেছেন জেলা প্রশাসন, জেলা আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো। মাঝে মধ্যেই উৎসুক জনতার অংশগ্রহণে আনন্দ মিছিল করতে ও মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায়। এক কথায় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সংবাদে আনন্দে ভাষছে শরীয়তপুর। শরীয়তপুর ষ্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসক ৩ দিনের কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। কর্মসূচির মধ্যে থাকবে প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ভিডিও চিত্রে দেখানো হবে পদ্মা সেতুর আদ্যোপান্ত। এরপর শহরে বনাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্র বের করা হবে। শিল্পীরা সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করবেন। রাতে আতশবাজি, ফানুষ ওড়ানো ও লেজার শো উপস্থাপন করা হবে। সারা শহরের সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে আলোকসজ্জা করা হবে। শরীয়তপুর শহর থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সড়ক সাজানো হবে। সেখানে জাতীয় পতাকা, প্রধানমন্ত্রীর ছবি, বঙ্গবন্ধুর ছবি, পদ্মা সেতুর বিভিন্ন সময়ের নির্মান কাজের ছবি, সরকারে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ছবি রাখা হবে। অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া সকল মানুষকে পদ্মা সেতু সম্বলিত টিশার্ট দেয়া হবে।
সংবাদ সম্পর্কে আপনার মতামত