ভেদেরগঞ্জ উপজেলায় মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতনের ভয়াবহতা দেখে পিতার মৃত্যু
1 min readশরীয়তপুর পত্রিকা প্রতিবেদকঃ
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার মধ্য ছয়গাঁও মোহাম্মাদীয়া ইছহাকিয়া নুরানি ফোরকানিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার ১০ বছর বয়সী এক শিশু শিক্ষার্থীর হাত-পায়ের তালুতে মারধর করেছেন মাদ্রাসাটির প্রিন্সিপাল হাফেজ শরীয়তুল্লাহ। চিকিৎসকদের বক্তব্য সন্তানের উপর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পিতার মৃত্যু হয়েছে। দুই চেয়ারম্যানসহ সমাজপতিরা দফায় দফায় সালিশি করে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছেন।
জানা যায়, গত ঈদুল আযহার ছুটিতে বাড়ি যায় শিশু শিক্ষার্থী। ফাহিম। ঈদের ছুটি শেষে মঙ্গলবার (২১ জুন) মাদ্রাসায় ফিরলে ফাহিম কাউকে না জানিয়ে পালিয়ে বাড়ি চলে যায়, একই দিন। ফাহিমের মা ফাহিমকে মাদ্রাসায় পৌঁছে দিয়ে হাফেজ শরীতুল্লাহকে অনুরোধ করেন এবারের মতন যেন ফাহিমকে মাফ করা হয়। কিন্তু হাফেজ শরীতুল্লাহ জানান, তুমি মা হিসেবে তোমার দায়িত্ব পালন করছো, আমার বিচারে যা হয় আমি তাই করব। তুমি বাড়ি চলে যাও। শিশু ফাহিম তখন তার মাকে বারবার অনুরোধ করে তাকে রেখে যেন মা বাড়ি চলে না যায়, কারণ মা যাওয়ার পর তাকে মারধর করা হবে। শিশু সন্তানের কথায় তিনি চিন্তায় পরে যান। সন্ধ্যা নেমে আসলে ফাহিমকে কয়েকজন শিক্ষার্থী দিয়ে চার হাত পায়ে ধরে মুখে গামছা বেঁধে হাত ও পায়ের তালুতে বেত দিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়, যা সন্ধ্যার অন্ধকারে লুকিয়ে সবই দেখেন। তিনি মুঠোফোনে বিষয়টি ফাহিমের বাবা মোক্তার শিকদারকে জানালে তিনি তার আত্মীয় আবুল কালামকে নিয়ে ফাহিমকে যখন গভীর রাতে উদ্ধার করেন তখন ফাহিম জ্বরে জর্জরিত নির্যাতনের কারণে।
পুলিশের সহযোগিতায় ফাহিমকে উদ্ধার শেষে ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার চিকিৎসা দিলে ফাহিমের পরিবারের ইচ্ছায় তাকে তার নানা বাড়িতে নিয়ে। যাওয়া হয়।
পরদিন সকালে ফাহিমের বাবা মোক্তার শিকদার অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ছয়গাঁও ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মোল্লা, ডামুড্যা দারুল আমান ইউপির চেয়ারম্যান মিন্টু শিকদার, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য হারুন রাড়ীসহ দুই এলাকার সমাজপতিরা প্রথমে ভেদরগঞ্জ জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, দ্বিতীয়বারে দারুল আমান ইউপি কার্যালয়, তৃতীয়বারে ভেদরগঞ্জ বাজারে হারুন রাড়ির ব্যক্তিগত কার্যালয়ে সালিসি করে বিষয়টি সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে মিটমাট করে ধামাচাপা দেন।
ফাহিমের মা পপি বেগম (৩০) বলেন, আমি তো ভাই অসহায়, আমার ছেলেটাকে এভাবে মারধর করেছে। ছেলেটার বাবাও গেছে, আমার মামলা চালানোর মতন টাকাও নাই। আপনারা আছেন, আর পাঁচ জনে যা করে।
উল্লেখ্য হাফেজ শরীতুল্লাহ ফাহিমের মা পপি বেগমেরও শিক্ষক। হাফেজ শরীতুল্লাহর বাড়ি বরিশাল জেলার মুলাদী থানার গাছুয়া ইউনিয়নে। ফাহিমের বাড়ি ডামুড্যা উপজেলার দারুল আমান ইউনিয়নের গুয়াখোলা গ্রামে।
ঘটনার ও সালিসির বিষয়টি জানার জন্য ছয়গাঁও ইউপির চেয়ারম্যান লিটন মোল্লাকে ফোন করলে তিনি দরবারে উপস্থিতির বিষয়টি অস্বীকার করে ফোন কেটে দেন। অন্যদিকে দারুল আমান ইউপির চেয়ারম্যান মিন্টু শিকদার প্রথম দরবার শেষে জানিয়েছেন আমরা পাঁচ লক্ষ টাকা দাবী করেছিলাম, তারা ১ লক্ষ ৩০ হাজার দিবে বলছে কিন্তু আমরা মানি নাই। হয়ত দেড় লাখ দিবে। সর্বশেষ সালিশি শেষে তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি (সাংবাদিক) আসেন, সাক্ষাতে কথা হবে। বিষয়টি সুরাহা হয়ে গেছে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাসান ইবনে আমিন বলেন, ফাহিমের হাত-পায়ের তালুসহ শরীরের যেসব জায়গায় আঘাত করলে পেইন বেশি হয় সেসব জায়গায় আঘাত করা হয়েছে। দুঃখজনক বিষয় হলো, ফাহিমের বাবা পরদিন সকালে কার্ডিয়াক অ্যাটাক করে মৃত্যু বরণ করেছেন। সন্তানের উপর নির্যাতন কোনো বাবাই সহ্য করতে পারে না। আমাদের ধারণা সন্তানের উপর নির্যাতনের কারণেই মোক্তার শিকদারের মৃত্যু হয়েছে।
ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাহালুল খান বলেন, আমার অফিসার ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে আমি শুনেছি দুই পক্ষ মিটমাট হয়ে গেছে। আমি ভুক্তভোগীকে মামলা দিতে বলেছি, লিখিত অভিযোগ পেলে আমি ব্যবস্থা নেব।
সংবাদ সম্পর্কে আপনার মতামত