ভূয়া দুদক কর্মকর্তাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

1 min read

স্টাফ রিপোর্টারঃ

রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর)  শরীয়তপুরের সখিপুর থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও চরসেনসাস ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান জিতু মিয়া বেপারী বাদী হয়ে এম.এ ইদ্রিস খান নামে এক ভূয়া দুদক কর্মকর্তাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে শরীয়তপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেছেন বলে যানা গেছে।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, প্রতিপক্ষের ইন্দনে জিতু মিয়া বেপারীর ক্ষতি করার জন্য চাঁদপুরের মতলব উপজেলার সুজাত খানের ছেলে এম.এ ইদ্রিস খান নামক এক ব্যক্তি দুদক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তার কাছে ২০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

এছাড়াও জিতু মিয়াকে ঢাকায় দুদুক কার্যালয়ে যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে ওই নম্বরে কল করলে তাকে মগবাজার যেতে বলে। এসময় ইদ্রিস খান নিজেকে দুদুক কার্যালয়ের স্টাফ পরিচয় দিয়ে বলে, আপনার বিরুদ্ধে শত কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে। তবে আমি আপনাকে মুক্ত করতে পারি। যদি আমাকে ২০ লক্ষ টাকা দেন।

এসময় তাকে আমার ভুয়া প্রমানিত হলে আমি তার পরিচয়পত্র দেখতে চাই। তখন সে বলে, আমি দুদকের লোক নই। আমি এনটিভি চ্যানেলের রিপোর্টার। আমি তখন সেই পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে সে বলে পরিচয়পত্র সাথে নেই। আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। পরে একটি পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ করে। পরে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় রবিবার  জিতু মিয়া বাদী হয়ে ৬ জনের নামে শরীয়তপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

জিতু মিয়া বেপারী বলেন, কোন ধরণের ভিত্তি ছাড়াই প্রতিপক্ষের লোকজনের মিথ্যা তথ্যের উপর নির্ভর করে এক বিভ্রান্তিকর সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যা আমার জন্য খুবই অসম্মানজনক।

“আমি শুরু থেকেই আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সরকারকে নিয়মিত ভ্যাট, ট্যাক্স প্রদান করে আসছি। যা আয়কর ফাইলে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অতএব অবৈধ সম্পদ অর্জনের কোন সুযোগই আমার নেই”- বলছিলেন জনাব জিতু মিয়া বেপারী।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ভাইরাল হওয়া ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, জিতু মিয়া বেপারী চরসেনসাস ইউনিয়নের বেড়াচাক্কি এলাকায় অন্যদের জমি জোরপূর্বক দখল, ইটভাটার জমি জোরপূর্বক দখল, চাঁদপুরে ৩টি বাড়ি, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ, চাঁদপুর এক হাসপাতালে ৮০% শেয়ার, গ্রামে আলিশান বাড়ি, শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরীঘাট নিয়ন্ত্রন করে কয়েক’শ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

এসব দাবির প্রতিটির ব্যাখ্যা দিয়ে নিজের বিরুদ্ধে চক্রান্তের বিষয়টি উল্লেখ্য করেন জিতু মিয়া বেপারী।
তিনি বলেন, “যে ব্যাক্তি আমাকে নিয়ে লিখেছেন। তিনি দুদক কর্মকর্তার পরিচয়ে প্রথমে আমার কাছে ২০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন, পরে এনটিভির ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয়ে দাবি করেন ৫০ হাজার টাকা। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারনে তিনি আমাকে নিয়ে সংবাদ প্রচারের হুমকি দেন। আমার বিপক্ষে সংবাদ প্রচারের জন্য অনেক লোক তাকে টাকা দিতে প্রস্তুত বলেও তিনি আমাকে হুমকি দিয়ে যান। আমার কাছ থেকে টাকা না পেয়ে, পরবর্তীতে আমার প্রতিপক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ঐ ব্যাক্তি আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণায় লিপ্ত হোন।

চরসেনসাস বেড়াচাক্কি এলাকায় জমি দখলের বিষয়ে জিতু মিয়া বেপারী বলেন, ২০-২৫ বছর আগে ঐ দুর্গম এলাকার জমি এক সময় ৩০-৪০ হাজার টাকা একর বিক্রি হতো আমি ঐ সময় ঐ এলাকায় কিছু জমি কিনেছিলাম। পরবর্তীতে ঐ জমি অন্য ব্যাক্তির কাছে লিজ দিয়েছি সেখানে তারা মাছের খামার করছে। ঐসব জমির যাবতীয় দলিলপত্র আমার কাছে রয়েছে। ঐ ঘের আমার না। তবে আমার একটা মাছের আড়ৎ আছে। যা আয়কর ফাইলে লিপিবদ্ধ।

আর, আমার ইটের ভাটার জমি মালিকদের কাছ থেকে লিজ নেয়ার যাবতীয় চুক্তি আমার কাছে সংরক্ষিত আছে। চাইলে দেখাতে পারবো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন জমি আমার দখলে নেই। চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। আর আমাদের গ্রামের বাড়িতে যৌথ পরিবার মিলে যে বাড়ি রয়েছে তা বহু বছরের পুরানো।

পার্শ্ববর্তী চাঁদপুর জেলায় জিতু বেপারীর ৩টি বাড়ি রয়েছে বলে যে তথ্য প্রতিবেদনে দেয়া হয়েছে, সে বিষয়েও পরিস্কার করেন সাবেক এ চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, চাঁদপুর জেলায় আমার স্ত্রীর নামে একটি চার তলা বাড়ি রয়েছে। অনেক আগে ঐ জমিটি আমারা কিনেছিলাম। পরে বছরে বছরে আস্তে আস্তে সেখানে চার তলা গড়ে তুলেছি। এছাড়া আমাদের আর কোন বাড়ি নেই। জামতলা এলাকায় একখন্ড পতিত জমি আছে। শেয়ার মার্কেটে আমার কোন বিনিয়োগ নেই। আর চাঁদপুরের যে হাসপাতালে আমার ৮০% শেয়ারের কথা বলা হয়েছে সেখানে মাত্র ৫% শেয়ার রয়েছে যাতে কোন প্রকার মুনাফা নেই।

দীর্ঘদিন ধরে ফেরী ঘাটের অবৈধ নিয়ন্ত্রনের বিষয়ে জিতু মিয়া বেপারী বলেন, প্রতিপক্ষের লোকজন টেন্ডার নিতে ব্যার্থ হওয়ার ক্ষোভে আমাকে দোষারোপ করছে। আমি শুধু বিআইডাব্লিউটিএর ইজারাদার হিসেবে লোকজন দিয়ে ধার্যকৃত টাকা উত্তোলন করি।

এক কথায় আমার সাথে রাজনৈতিকভাবে, ব্যবসায়ীক ও সামাজিকভাবে ব্যার্থ হয়ে আমার সুনামক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে আমার প্রতিপক্ষের লোকজন। কিন্তু এলাকার লোকজন আমার সম্পর্কে অবগত আছে। আমি কেমন মানুষ। আমার কর্ম দ্বারাই আমি জনগনের কাছে বিবেচিত হবো। আমার আয় ব্যয়ের হিসাব নিয়মিত আয়কর ফাইলে লিপিবদ্ধ আছে। আমি আমার সকল সম্পত্তির বিষয়ে সব যায়গায় হিসেব দিতে প্রস্তুত।

চেয়ারম্যান হওয়ার পূর্বে আমার ভাইয়ের স্বর্ণের ব্যবসা ছিলো, দক্ষিন তারাবুনিয়া মাল বাজারে আমার নিজের রাইচ মিল ছিলো তাছাড়া ঐ সময় আমি ছোটখাটো ঠিকাদারী করতাম। এলাকার লোকজন সবাই এটা জানে। ঐ ভূয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমি মাছ বিক্রেতা থেকে চেয়ারম্যান, কোটিপতি। এ ধরনের মিথ্যা ও অসম্মানজনক তথ্যের আমি তীব্র নিন্দা জানাই এবং বিচার চাই।

সংবাদ সম্পর্কে আপনার মতামত

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.