এস এম বাবুঃ
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! জুমার দিন যখন নামাজের জন্য ডাকা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং কেনা-বেচা ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ কিন্তু জুমার নামাজে যাওয়ার আগে রয়েছে বিশেষ কিছু প্রস্তুতি। এ প্রস্তুতিগু আবার জুমার দিনের ফজিলতপূর্ণ আমলও বটে। এতেও মিলবে সওয়াব এবং উপকারিতা। নামাজের যাওয়ার আগের সেসব প্রস্তুতি ও ফজিলতগুলো কী?
জুমার নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি নেওয়া সুন্নাত ও সওয়াবের কাজ। জুমা পড়তে যাওয়ার আগে এ প্রস্তুতিগুলো নেওয়ার ব্যাপারে জোর দিকনির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কারণ হলো, নামাজের আজান বা সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন মসজিদে গিয়ে উপস্থিত হওয়া যায়। জুমার দিনের প্রস্তুতিগুলো হলো
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
জুমার দিন নামাজের যাওয়ার আগে শারীরিক পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেওয়া জরুরি। চুল, নখ, গোঁফ এবং অযাচিত পশম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোসলের আগে সাধ্যমতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হতে বলেছেন।
২. দাঁত ও মুখ পরিষ্কারে মেসওয়াক করা
গোসলের আগে মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দাঁত ব্রাশ করা বা মাজন ব্যবহার করা। জুমার নামাজসহ সব নামাজ ও অজুর আগে মেসওয়াক করার কথাও বলেছেন বিশ্বনবি। এটি জুমার আগের একটি আবশ্যক কাজ। হাদিসে এসেছে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক সাবালকের জন্য জুমার দিন গোসল করা, মেসওয়াক করা এবং যথাসাধ্য সুগন্ধি ব্যবহার করা কর্তব্য।’ (মুসলিম)
৩. উত্তমভাবে গোসল করা
জুমার নামাজের উদ্দেশ্যে পবিত্রতা অর্জনের জন্য উত্তমরূপে গোসল করাও ইবাদতের অন্তর্ভূক্ত। জুমার দিন গোসল করার ব্যাপারে রয়েছে জোর দিকনির্দেশনা। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা প্রমাণিত
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে (নামাজের আগে পবিত্রতার অর্জনের উদ্দেশ্যে) গোসল করবে; এ গোসল (তার জন্য) উত্তম।’ (তিরমিজি)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ
> হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে আরও বর্ণিত আছে, ‘ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু জুমুআর দিন দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রথম যুগের একজন মুহাজির সাহাবি (মসজিদে) আসলেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে ডেকে বললেন, এখন সময় কত? তিনি বললেন, আমি ব্যস্ত ছিলাম, তাই ঘরে ফিরে আসতে পারিনি। এমন সময় আজান শুনে শুধু অজু করে নিলাম। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, কেবল অজুই? অথচ আপনি জানেন যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম (জুমার নামাজ পড়ার জন্য) গোসলের নির্দেশ দিতেন।’ (বুখারি)
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমুআর দিনে প্রত্যেক সাবালক তথা প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য গোসল করা ওয়াজিব বা আবশ্যক।’ (বুখারি)
৪. সুগন্ধি ও তেল ব্যবহার করা
জুমার নামাজের জন্য প্রস্তুতিস্বরুপ দেহের দুর্গন্ধ দূর করা, সে জন্য গোসল করা এরপর তেল ও সুগন্ধি তথা আতর ব্যবহার করা। হাদিসে এসেছে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করবে, যথাসাধ্য পবিত্রতা অর্জন করবে, তেল ব্যবহার করবে, অথবা নিজ পরিবারের সুগন্ধি নিয়ে ব্যবহার করবে, এরপর (জুমার জন্য) বের হয়ে (মসজিদে) দুই নামাজির মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করবে না (কাতার চিরবে না), এরপর ভাগ্যে যা লিখা ছিল সে পরিমাণ নামাজ পড়বে; তারপর ইমাম খুতবা দিলে চুপ থাকবে, সে ব্যক্তির ওই জুমা থেকে আগামী জুমা পর্যন্ত কৃত পাপ মাফ হয়ে যাবে।’ (বুখারি, মিশকাত)
৫. সুন্দর ও উত্তম পোষাক পরা
জুমার নামাজের জন্য সাধ্যমত উত্তম পোশাক পরে মসজিদে আসা। যদি নতুন পোশাক না থাকে তবে যে পোশাক আছে তা জুমার নামাজের জন্য ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখা। হাদিসে এসেছে
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি জুমার দিনে তার কর্মক্ষেত্রে ব্যবহৃত দু’টি কাপড় ব্যতিত অন্য দু’টি (উত্তম) কাপড় ব্যবহার করতে সক্ষম হয় তাহলে সে যেন তা ব্যবহার করে।” (আবু দাউদ, মিশকাত)
৬. হেঁটে হেঁটে মসজিদে যাওয়া
জুমার নামাজের জন্য আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে মসজিদের দিকে পায়ে হেঁটে রওয়ানা হওয়া। হাদিসে এসেছে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন (মাথা) ধৌত করে ও যথা নিয়মে গোসল করে, সকাল-সকাল ও আগে-আগে (মসজিদে যাওয়ার জন্য) প্রস্তুত হয়, (যানবাহনে) না ওঠে পায়ে হেঁটে (মসজিদে) যায়, ইমামের কাছাকাছি বসে মনোযোগ সহকারে (খুতবা) শুনে এবং কোনো অসার ক্রিয়া-কলাপ করে না, সে ব্যক্তির প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে এক বৎসরের নেক আমল ও তার (সারা বছরের) রোজা ও নামাজের সওয়াব লাভ হয়!’ (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ)
জুমার দিন নামাজের যাওয়ার আগে এসব প্রস্তুতিগুলো সুন্নাত আমল ও সওয়াবের ফজিলতপূর্ণ কাজ।
সংবাদ সম্পর্কে আপনার মতামত