নারায়ণগঞ্জে লঞ্চডুবিতে নিহত ও নিখোঁজদের বাড়িতে মাতম

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় মুন্সীগঞ্জগামী লঞ্চ এমএল আশরাফ উদ্দিন দুর্ঘটনায় নিহত ও নিখোঁজদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। মুন্সীগঞ্জের শিলমন্দি এলাকার শ্বশুরকে নিয়ে ছেলের বউ ও নাতি নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাতে। শ্বশুর ফিরলেও হারাতে হয়েছে ছেলের বউ ও নাতিকে। আর মুন্সীগঞ্জের জুগিনিঘাট এলাকায় নিখোঁজ রয়েছে হাতেম (৫৫)। প্রবাসী হাতেম ওপেন হার্ট সার্জারির রোগী। ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জে। স্ত্রীর সাথে কথা বলে লঞ্চের উঠলেও পরে আর ফোন রিং বাজেনি। প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন মুন্সীগঞ্জের আব্দুর রব, তবে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তিনি। অঝোরে ঝরছে অশ্রু। ছেলের বৌ আরিফা (৩২) ও তার ছেলে সাফায়েতের মরদেহ (দেড় বছর) গতকাল রাত ১২টার দিকে দাফন করা হয়। এখন বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

আব্দুর রউফের ছেলে দ্বীন ইসলাম জানান, বউ ও ছেলেকে হারিয়েছি। কিছুদিন আগেও নারায়ণগঞ্জে লঞ্চ দুর্ঘটনায় আমাদের এলাকার মানুষ মারা যায়। বারবার দুর্ঘটনা কেন? কার্গো জাহাজ এই নৌরুটে যত্রতত্র রাখা। সরকারের কাছে চাই দ্রুত বিচার। আর যাতে এ রকম দুর্ঘটনা না ঘটে।

নিহত আরিফার বড় ছেলে মাহিন বলে, ‘আমি স্কুল থেকে আইলে মায় কয় ছোট ভাইরে তোর কাছে রাইখা আমি তহন নারায়ণগঞ্জ ডাক্তার দেখাতে যামু। আমি কই ছোট ভাইরে রাখতে পারুম না, কান্নাকাটি করব। তাই ভাইরে লইয়া মায় নারায়ণগঞ্জ যায়। পড়ে শুনি লঞ্চ ডুবে গেছে। সবার লগে গিয়া মায়ের মৃতদেহটা লইয়া আহি।’

নিখোঁজ হাতেমের স্ত্রী মোমেলা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী হার্টের রোগী। সাথে আমারও যাওয়ার কথা আছিল নারায়ণগঞ্জে ডাক্তার দেখাইতে। লঞ্চে উঠার পর আমার সাথে কথা অয়। এরপর থেকে ফোন বন্ধ। লঞ্চ পাওয়া গেল কিন্তু আমার স্বামীরে পাওয়া গেল না। অন্তত লাশ খুঁইজ্যা বের করে দিতে বলেন সরকারকে।’

নিখোঁজ হাতেমের মেয়ে কাকলি বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘শ্বশুরবাড়ি আছিলাম। মায়রে ফোন দিলে কয় তোর বাবায় নারায়ণগঞ্জ গেছে ডাক্তর দেখাইতে। পরে শুনতে পাইলাম লঞ্চ ডুবছে। মায়রে ফোন দিয়া কই বাবারে ফোন দাও। নারায়ণগঞ্জে লঞ্চ ডুবছে। বাবার ফোনে আমরা ফোন দেই বারবার, ফোন আর বাজে না। এখনও নিখোঁজ আছে বাবায়। রাত ১২টায় লঞ্চ উপরে উডাইছে, ভিতর বাবারে পাইলাম না। বাবার লাশটা খুঁইজ্যা দেন।

সংবাদ সম্পর্কে আপনার মতামত

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.