নড়িয়ায় গ্যাসের অনুসন্ধানের পর কোন গ্যাস মজুত পাওয়া যায়নি, কর্মকর্তা কর্মচারীরা চলে যাচ্ছেন নোয়াখালীতে।
1 min readডেস্ক রিপোর্ট// শরীয়তপুরের নড়িয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধানের পর গ্যাস কোন মজুত পাওয়া যায়নি। সম্ভাব্য এই গ্যাস কুপখনন করতেই প্রতিষ্ঠানটি ব্যয় করেছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু গ্যাস অনুসন্ধানের নির্ধারিত গভীরতার থেকে আরোও ১০০ ফুট বেশি কুপখনন করলেও ঐ স্থানে প্রাকৃতিক গ্যাসের কোন সিন্টম পায়নি গ্যাস অনুসন্ধানকারীরা। এবছরের মার্চের শেষের দিকে ৩ হাজার ৩ শ’ফুট খননের পরেই এখানে গ্যাস নেই তথ্য নিশ্চিত হন বাপেক্স।
পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স শরীয়তপুর সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মেঘনা নদীর তীর শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি থেকে খুলনা পর্যন্ত বিশাল এলাকা জুড়ে দ্বিমাত্রিক ভূকম্প জরিপ (টুডি সিসমিক সার্ভে) করা হয়। ঐ জরিপে নড়িয়া উপজেলার চামটা ইউনিয়নের দিনারা গ্রামে ভূগর্ভে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল।
এখানে কূপ খননের কাজ শুরু করা হয়েছিলো ২০২২ সালের নভেম্বরে। খনন প্রকল্পের মেয়াদ ছিলো ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত। তবে মেয়াদকাল ফুরানোর আগেই গ্যাস কুপ খননের কাজ সমাপ্ত হয়ে যায়। পরে সেখান মাটি ও বিভিন্ন পদার্থের টেষ্ট করেও গ্যাসের সন্ধান মিলেনি। তাই শরীয়তপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প-১–এর প্রকল্পের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীরা এই স্টেশন থেকে সব প্রকার খনন যন্ত্র নিয়ে চলে যাচ্ছেন নোয়াখালীতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খননের সেই কর্মযজ্ঞ এখন আর নেই। অধিকাংশ যন্ত্রপাতি নিয়ে চলে গেছেন অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীরা। সবাই ব্যস্ত আছেন নোয়াখালীর আর একটি গ্যাসের অনুসন্ধানের কুপ খনন করতে যেতে। তবে গ্যাস না পাওয়ার খবরের পরে স্থানীয় এলাকাবাসীর ভিতরে ক্ষোভ বিরাজ করতে দেখা যায়।
দিনারা গ্রামের বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, আমার ৬৬ শতাংশ জমি বাদ্য হয়েই দিয়েছিলাম। তবে বিনিময় কি পেলাম। জমির খাজনার টাকা দিয়ে কি হবে। জেলার ভিতরে দিনার বাসিন্দা হয়ে নিজেকে খুব গর্ব করতাম। আজ আমাদের জনগণের এত্তগুলা টাকা বিফলে গেলো এর দায় কার? আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। আমি চাই ভালো করে দেখা হউক এখানে গ্যাস আছে কিনা। তবে গ্যাস যদি না পায় তাহলে কে এই তথ্য দিল যে এখানে গ্যাস মজুত আছে। জনগনের টাকা দিয়ে তামাশা শুরু করেছে।
এ বিষয়ে বাপেক্স মহাপরিচালক ও শরীয়তপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প-১–এর প্রকল্পের এ্যাডমিন নুর ইসলাম জানান, এ বিষয় আমি বেশি কিছু জানিনা। বিষয়টা হলো প্রথম আমার গ্যাস পাবার আইডিয়াই ছিল। তবে কুপ খননের মাপের চাইতেও ১০০ ফুট মোট ৩৩ শ ফুট গভীর করে এবং বোমা ফুটিয়েও কোন গ্যাসের সন্ধান এখানে পাওয়া যায়নি। তাই আমরা এখন থেকে নোয়াখালী কুপ খনের স্টেশনে যাবো।
এ বিষয়ে বাপেক্স মহাপরিচালক ও শরীয়তপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প-১–এর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. তোফায়েল উদ্দিন সিকদার (তুষার) জানান, আমরা নড়িয়ার চামটায় গ্যাসের অনু সন্ধানের কুপখনন কাজ শেষ করতে পেরেছি। তবে এখানে কোন গ্যাস মজুত নেই এই বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি মার্চের শেষে এসে। এখানে গ্যাস সাপ্লাই দেয়ার মত কোন জায়গা না। তাই আমাদের এখানের খননযন্ত্র গুলা নিয়ে আমরা নোয়াখালী সুন্দরপুর ৩ প্রকল্প গ্যাসের কপখননের অনুসন্ধানের স্টেশনে নেয়া হবে।
বাপেক্স এর প্রজেক্ট ডায়রেক্টর (পিডি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, কুপ খননের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী এখানে কোন গ্যাসের মজুত নেই আবার রিভিজিট করবো। তখন এই প্রকল্পে ব্যপারে বলা যাবে। আর আমাদের ৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রকল্প। বর্তমানে ডলারের দাম সহ সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়া হয়ত আমাদের এখানে আনুমানিক ১২০ কোটি টাকার মত খরচ হতে পারে।
এর আগে, খনিজ ও জ্বালানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে প্রাতমিকভাবে তৈরি করা হয় ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প। পরে আরো ৫ কোটি টাকা খরচ বাড়িয়ে ১০০ কেটি টাকার উপরে ব্যয় হয়েছে। দেড় বছর মেয়াদি ‘শরীয়তপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প-১’ নামের প্রকল্পটির কাজ শুরু করেছিলো ২০২১ সালের জুলাই মাসে। চলবে ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত।
অনুসন্ধান কূপ খনন করার জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ৬ দশমিক ৪৯ একর জমির হুকুম দখল নেওয়া হয়েছে। ওই জমিতে থাকা ফসলের দুই বছরের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিলো।
সংবাদ সুত্র// যায়যায়দিন
সংবাদ সম্পর্কে আপনার মতামত