ককটেলের বিস্ফোরণে আহত নড়িয়ার শিশুটি এখন চিকিৎসার অভাবে যন্ত্রণায় ছটফট করছে
অনলাইন// গত ১০ মে বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিবেশীর বাড়িতে আম কুড়াতে যায় সে। সেখানে বসতঘরের পাশে তিনটি ককটেল পড়ে ছিল। খেলার বল ভেবে একটি ককটেল হাতে নেয় নুসরাত। সঙ্গে সঙ্গে সেটি বিস্ফোরিত হয়। এতে তার ডান হাত, মুখমণ্ডল, ডান চোখ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
সেখান থেকে নুসরাতকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে নেওয়া হয় জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। ওই দিন সেখানে অস্ত্রোপচার করে তার ডান হাতের চারটি আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়। পরের দিন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নিয়ে অস্ত্রোপচার করে ডান চোখের ভেতর থেকে কাচের টুকরা বের করা হয়। দুটি হাসপাতালে ৯ দিন থাকার পর ১৯ মে তাকে নিয়ে গ্রামে ফেরেন মা–বাবা।
২ বছরের নুসরাতের ডান হাতের চারটি আঙুল কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। ডান চোখটি নষ্ট হয়ে গেছে। পড়ে থাকা ককটেলের বিস্ফোরণে আহত শিশুটি এখন চিকিৎসার অভাবে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে এরই মধ্যে সর্বস্ব হারিয়ে ঋণে জড়িয়েছে দরিদ্র পরিবারটি।
নুসরাত শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার দক্ষিণ চাকধ গ্রামের লাভলু সরদারের মেয়ে ও স্থানীয় দক্ষিণ চাকধ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, নুসরাতের বাবা লাভলু সরদার একজন দিনমজুর। তাঁর দুই সন্তানের মধ্যে নুসরাত বড়।
নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা সেলিম রেজা এক দিন পরপর নুসরাতের ক্ষত জীবাণুমুক্ত করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটির এক হাতের চারটি আঙ্গুল অস্ত্রোপচার করে ফেলে দিতে হয়েছে। ককটেলের কাচের টুকরা চোখের মণিতে আঘাত করেছিল। চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সে ওই চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে কি না, তা বলা যাচ্ছে না। তাকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করাতে হবে।
ভূমখারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব মেয়েটিকে উন্নত চিকিৎসা করানোর জন্য। পুলিশকে অনুরোধ করেছি, এ ঘটনার পেছনে কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করার জন্য।’
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই নির্জন বাড়িতে কারা ককটেল রেখেছিল, পুলিশ তা তদন্ত করে দেখছে।
২ শতাংশ পৈতৃক জমিতে করা টিনের ছাপড়া ঘরটি ছাড়া কোনো কৃষিজমি নেই নুসরাতের বাবা লাভলু সরদারের। গ্রামে শ্রমিকের কাজ করে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ টাকা আয় হয় তাঁর, যা দিয়ে সংসারের খরচ চালান।
লাভলু সরদার বলেন, হঠাৎ মেয়ের এমন দুর্ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসা করাতে ইতোমধ্যে ৮০ হাজার টাকা ঋণ করতে হয়েছে। নুসরাতকে সুস্থ করে তুলতে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করাতে হবে। এ চিকিৎসার খরচ কীভাবে জোগাড় হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
সম্প্রতি দক্ষিণ চাকধ গ্রামে নুসরাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ডান হাত, ডান চোখে ব্যান্ডেস ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত নিয়ে যন্ত্রণায় কিছুক্ষণ পরপর কাঁদছে নুসরাত।
এ সময় নুসরাতের মা ফাতেমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়েকে ঢাকায় রেখে চিকিৎসা করানো দরকার। আমাদের সেই আর্থিক সামর্থ্য নাই। হাত ও চোখের অপারেশন করার পর তাঁকে বাড়ি নিয়া আসছি। প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় দৌড়াইতে হচ্ছে। মেয়েটা কষ্টে ছটফট করছে। আমার ছোট্ট মেয়েটির সঙ্গে কেন এমন হলো? ঘরের পেছনে কোথা থেকে ককটেল এল? পুলিশও ঘটনা উদ্ঘাটনে তদন্ত করছে না।’
নুসরাতের বাবা লাভলু সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৮ দিন হয় মেয়েকে নিয়ে ছোটাছুটি করতে গিয়ে কাজে যেতে পারিনি। আয় বন্ধ, মেয়ের চিকিৎসা ব্যয় চালাতে হচ্ছে। কী দিয়ে কী করব, বুঝতে পারি না।’
সংবাদ সুত্র// প্রথম আলো//
সংবাদ সম্পর্কে আপনার মতামত