অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য গোসাইরহাটে জমি পেল বেজা

অনলাইন//  একটি কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার আলাউলপুর ইউনিয়নের চরজালালপুর এলাকায় ৬৮৬ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। মেঘনা নদীর ওই চরের এই খাস জমি প্রতীকী মূল্যে বেজাকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান ১ জুন দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত চুক্তির দলিল রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন।

সরকারি হিসেবে জমিটির বাজারমূল্য ১১ কোটি ১৪ লাখ ৮১ হাজার ৮৬০ টাকা, তবে বেজাকে দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ১ টাকার প্রতীকী মূল্যে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এ অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য এটিকে বড় একটি উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন স্থানীয় লোকজন।

গোসাইরহাট উপজেলা কৃষিপ্রধান এলাকা। এখানে ধান, ডাল ও মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদিত হয়। এখানে মেঘনা ও পদ্মা নদীতে প্রচুর মাছের উৎপাদন হয়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এ অঞ্চলের কৃষিপণ্যের বাজার আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। সেতু চালু হওয়ার বছর না ঘুরতেই এত বড় উদ্যোগ এ অঞ্চলের মানুষের জন্য বড় প্রাপ্তি। কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু করা হলে এলাকাটির উন্নয়ন হবে। অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

গোসাইরহাট উপজেলাটি মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মেঘনা নদীর চর রয়েছে। উপজেলা সদর থেকে অন্তত ১০ কিলোমিটার উত্তর–পূর্ব দিকে আলওয়ালপুর ইউনিয়নের অবস্থান। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য নির্ধারিত স্থানটির একদিকে চাঁদপুর ও অন্যদিকে বরিশালের সীমানা রয়েছে।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইফুদ্দিন গিয়াস প্রথম আলোকে বলেন, কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য মেঘনার চরের জমি প্রস্তাব দেওয়ার পর ভূমি মন্ত্রণালয় ও বেজার কর্মকর্তারা ওই এলাকা বিভিন্ন সময় পরিদর্শন করেছেন। জমির অবস্থান, পরিবেশ ও যোগাযোগের বিষয়গুলো বেজার পছন্দ হয়েছিল। তারপর বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া এগিয়েছে। কিছু শর্ত সাপেক্ষে ওই জমি বেজার অনুকুলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য আরও ১৫টি ব্রডগেজ কোচ শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গোসাইরহাট উপজেলায় মেঘনা নদীর তীরে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে জমি চায় বেজা। তখন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসন ১০৫ নম্বর চরজালালপুর মৌজার ৬৮৬ একর অকৃষি খাসজমির প্রস্তাব পাঠায়। যার বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয় ১১ কোটি ১৪ লাখ ৮১ হাজার ৮৬০ টাকা। ওই মূল্য নির্ধারণ করে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে বেজাকে চিঠি দেওয়া হয়। বেজা ওই জমি প্রতীকী মূল্যে পেতে চায়। তখন ১ লাখ ১ টাকা প্রতীকী মূল্য নির্ধারণ করে ভূমি মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের খাসজমি ১ অধিশাখা থেকে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসককে গত ২০ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়ে বেজাকে ওই জমি রেজিস্ট্রেশন করে ও দখল বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। এরপর ৭ মার্চ জেলা প্রশাসক বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত চুক্তি দলিল সম্পাদন করার ও দখল বুঝে নেওয়ার অনুরোধ জানান।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বেজাকে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখন জমি হস্তান্তর করে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। জমি বুঝে পাওয়ার পর বেজা কর্তৃপক্ষ অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ শুরু করবে। আর সরকার যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন করবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওই স্থান থেকে নৌ ও সড়ক পথ দুটিই ব্যবহার করতে পারবে বিনিয়োগকারী ও বায়াররা।

জেলা প্রশাসক বলেন, শরীয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চল কৃষির জন্য সম্ভাবনাময় একটি জনপদ। পদ্মা সেতু সে সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। পদ্মা সেতু পেরিয়ে জাজিরার সবজি এখন ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে। এখানকার কৃষিতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে, বিনিয়োগ বাড়ছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর মেঘনার চরে কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত বেজার একটি বড় উদ্যোগ।

সুত্র: প্রথম আলো।

সংবাদ সম্পর্কে আপনার মতামত

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.