নারায়নগঞ্জে খুন হওয়া ভেদরগঞ্জ পৌরসভার আলী মোল্লা খুনী সনাক্ত// লোমহর্ষক খুনের স্বীকারোক্তি
1 min readআলী হোসেন মোল্যা শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। সাটার মিস্ত্রীর কাজ করতেন নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর খাসপাড়া এলাকায় । বিগত এক মাস যাবত খোজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
নারায়নগঞ্জ এ প্রকাশিত একটি সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানা যায়, চলতি বছরের আলাী হোসেনের সাথে পরিচয় হয় পেশাদার যৌন কর্মী সুমি আক্তার ওরফে পাখির সাথে। আলী হোসেন মোল্যা ও সুমির মধ্যে প্রেমের সম্পর্কও গড়ে ওঠে পাশাপাশি তাদের মধ্যে নিয়মিত সম্পর্ক হতো। এরই মধ্যে গত এপ্রিলে সুমি আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় ভোলার চরফ্যাশনের মোহাম্মদপুর গ্রামের মো. বাগন আলীর ছেলে আবু বকর সিদ্দিকের। বিয়ের পর সুমি আক্তার তার পেশা ছেড়ে দেন। তবে পুরোনো প্রেমিক আলী হোসেন সুমি আক্তারকে নিয়মিত মোবাইল ফোনে বিরক্ত করতেন। সুমি আক্তারের প্রতি আলী হোসেনের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও তার প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না সুমির। এক পর্যায়ে গত ৪ মে সন্ধ্যায় কাঁচপুর সেনপাড়া এলাকায় আলী হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন সুমি আক্তার।
স্বামী আবু বকর সিদ্দিক বাসায় না থাকায় আলী হোসেনকে কাঁচপুর থেকে সারুলিয়া এলাকায় নিজেদের বাসায় নিয়ে যায় সুমি আক্তার। ওই রাতে স্বামী আবু বকর বাসায় এসে তাদের দুজনকে একসঙ্গে দেখতে পান। এসময় তাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা ও ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে আবু বকর সিদ্দিক আলী হোসেনকে ঘুষি মেরে ফেলে দিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এসময় সুমি আক্তার আলী হোসেনের পা চেপে ধরে হত্যাকাণ্ডে স্বামীকে সহযোগিতা করেন।
হত্যার পর সুমি আক্তার ও তার স্বামী আবু বকর সিদ্দিক তাদের ঘরে থাকা বটি ও ছুরি দিয়ে আলী হোসেনের পেট কেটে নাড়িভুঁড়ি বের করে ময়লার ঝুড়িতে করে ফেলে দেন। খুনের পর সারা রাত তারা আলী হোসেনের মরদেহ ১২ টুকরো করেন এবং পরদিন (৫ মে) রাতে সেই টুকরোগুলো সারুলিয়া ঝিলের বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেন।
আলী হোসেন নিখোঁজের ঘটনায় গত ১৯ মে তার স্ত্রী মিনু বেগমের দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরি (জিডি) তদন্ত করতে গিয়ে এ তথ্য উদঘাটন করে সোনারগাঁও থানা পুলিশ। এরপর এ ঘটনায় গত (৫ জুন) সকালে সোনারগাঁ থানায় সুমি আক্তার ওরফে পাখি এবং তার স্বামী আবু বকর সিদ্দিককে আসামি করে অপহরণ ও হত্যা মামলা দায়ের হয়।
মামলা দায়েরের ৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত দম্পত্তিকে ডেমরার সারুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে সোনারগাঁ থানা পুলিশ। এরপর তাদের কাছ থেকে হত্যার ওই লোমহর্ষক বিস্তারিত জানতে পারে পুলিশ। পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে সোমবার (৫ জুন) সারাদিন সারুলিয়া ঝিলে ডুবুরি দিয়ে খোঁজ করেও মরদেহের কোনো অংশের সন্ধান পাননি। তবে তাদের বাসা থেকে আলী হোসেনের ব্যবহৃত জুতা উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মঙ্গলবার (৬ জুন) নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসাদ বেগমের আদালতে এবং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সানজিরা সরোয়ারের আদালতে হাজির করা হলে অভিযুক্ত দম্পতি মরদেহ ১২ টুকরো করে ঝিলে ফেলে দেওয়ার লোমহর্ষক জবানবন্দি দেন ।
তদন্তকারী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ আরও জানান, সুমি আক্তারের প্রথম স্বামী মদনপুর এলাকার জাহাঙ্গীর আলমকেও দুজনে মিলে হত্যা করেন এবং মরদেহ বাড়ির পাশের ড্রেনে ফেলে রাখেন। পরবর্তীতে ডেমরা থানা পুলিশ কঙ্কাল উদ্ধার করে। ওই ঘটনায়ও তাদের নামে মামলা হয়। তবে ওই হত্যাকাণ্ড থেকেই মূলত তাদের মানুষ হত্যার ভীতি দূর হয়ে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, সুমির প্রথম স্বামী জাহাঙ্গীর আলমই নাকি তাকে যৌন কর্মী হতে বাধ্য করেন। সেই ক্ষোভে দ্বিতীয় স্বামী আবু বকর সিদ্দিকের সহযোগিতায় তাকে হত্যা করেন সুমি।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আলী হোসেন হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তারকৃত দম্পত্তি সুমি আক্তার ও আবু বকর সিদ্দিক পৃথক আদালতে আলী হোসেন হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তি শেষে তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
সংবাদ সম্পর্কে আপনার মতামত