সখিপুরে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের দিয়ে বাসার কাজ করানো ও জালিয়াতির অভিযোগ

1 min read

অনলাইন//  ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের দিয়ে নিজ বাসাবাড়ির কাজ করানোর অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের ৪২ নং তারাবুনিয়া বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুনের বিরুদ্ধে।

শিক্ষার্থীদের দিয়ে নিজের বাসা, বাথরুম ও বাগান পরিষ্কার করানোর অভিযোগ চলতি বছরের ৫ আগস্ট লিখিত আকারে জেলা ও উপজেলার সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে জমা দেন এক অভিভাবক। এরপর উপজেলা প্রশাসন থেকে ঘটনাটি তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গত ৬ আগস্ট বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছে।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন ২০০৯ সালে তারাবুনিয়া বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন। এরপর থেকেই পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিয়ে নিজ বাসা, বাথরুম, বাগান ও পানির ট্যাংক পরিষ্কারের কাজ করান শিক্ষক ফাতেমা। এ ছাড়া স্বাক্ষর জাল করে ভূয়া বিল ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ, বিদ্যালয়ে দেরি করে আসা, শিক্ষার্থীদের কাছে বাধ্যতামূলক গাইড বই বিক্রি, পুরোনো বই ফেরত নিয়ে বিক্রি করাসহ নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিভাবকদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আফছানা বেগম নামে এক অভিভাবক। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক ফাতেমার অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেণির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, প্রাইভেট না পড়লে ও বাসার বাথরুম, বাসার রুম ঝাড়ু, বাগান ও পানির টাংকি পরিষ্কার এবং ঘর না মুছলে ফেল করানোর ভয় দেখায় ফাতেমা ম্যাডাম। গাইড বই না কিনলে তিনি আমাদের বকাঝকা করেন ম্যাডাম। তাই ভয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া হয় না।

আবু কালাম প্রধানিয়া নামের এক অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে ওই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। প্রধান শিক্ষক ফাতেমা পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখায়ে ছেলেকে দিয়ে জোর করে বাথরুম, ঘর পরিষ্কার করিয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক যদি এমন হয়, তাহলে ছেলে কী শিখবে। এ ধরনের আচরণের জন্য তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

এদিকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম জাহাঙ্গীর আলমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শামীম আহমেদ সরকার বলেন, প্রধান শিক্ষক ফাতেমা আমার স্বাক্ষর জাল করে ভূয়া বিল ভাউচার করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খারাপ আচরণ করেন। তার আচরণে সবাই বিরক্ত। তার কারণে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ২০০৯ সালে ফাতেমা খাতুন স্কুলের দায়িত্বে আসার পর থেকে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটিসহ এলাকার কোনো মানুষ তাকে এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দেখতে চান না।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য কিছু লোকজন আমার বিরোধীতা করছে। আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আ. ছোবাহান মুন্সী বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকের কাছে পাঠানো হবে। আর বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে খুব শিগগিরিই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংবাদ সম্পর্কে আপনার মতামত

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.